জরায়ু মুখ ক্যান্সারঃ ভয়াবহতা ও বাস্তবতা

জরায়ুমুখ ক্যান্সার

 

জরায়ু মুখ ক্যান্সারঃ ভয়াবহতা ও বাস্তবতা।

অথবা মায়ের জন্য পদযাত্রা।

…………………………………………………………

রোগী কথন কেউ পড়ুক আর না পড়ুক আমি আমার দায়বদ্ধতা থেকে লিখি। লিখতেই থাকব। আরেকটি কথা, আমার এ লেখার উদ্দেশ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাউকে পারদর্শী করে তোলা নয়। সেটার জন্য বই আছে, নির্দিষ্ট সেক্টর আছে। আমি বরঞ্চ সেইটুকু করতে চাই, যেটুকু জানলে আমরা সচেতন হতে পারব এবং সংশ্লিষ্ট রোগের ভয়াবহতা কিছুটা হলেও কমাতে পারব।

জরায়ু মুখ ক্যান্সারঃ ভয়াবহতা ও বাস্তবতা

অথবা মায়ের জন্য পদযাত্রা

আজকে আমরা কথা বলব জরায়ুমুখ ক্যান্সার নিয়ে। কিছুদিন আগে এ রোগের সচেতনতার জন্য একটি রেলি হয়েছিল, নাম ছিল “মায়ের জন্য পদযাত্রা”। সেই যাত্রায়ই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এ ব্যাপারে কিছু লেখার। মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে আসুন একটা গল্প শুনি-

আছিয়া বিবি। বয়স পঞ্চান্ন বছর। সহজ সরল এক গ্রামীন নারী। সাত সাতটি সন্তানের মা। তেরো বছর বয়সে বধু হয়। চৌদ্দ বছর বয়সে মা। স্বামী ট্রাক ড্রাইভার। সুঠাম, প্রানবন্ত, সহাস্যমুখ তবে একটু এদিক ওদিক যাবার দোষ আছে। অবশ্য এমন দোষে আছিয়া বিবি তেমন গা করে না। করেই বা কি করবে?? পুরুষ মানুষের এমন একটু আধটু দোষ মনেকয় জায়েজ। তারপরও একটা দীর্ঘশ্বাস ঠিকই আছিয়া বুকচিড়ে বেড়িয়ে আসে।

কিছুদিন হয় যখন তখন মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত যায়। সাথে ময়লা ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব। শরীরের ওজনও দিনদিন কমছে। দুর্বল লাগে। স্বামী সহবাসে রক্ত যায় দেখে ওসব বাদ দিয়েছে অনেক কাল। তয় রোজ রোজ রক্ত গেলে নামাজ রোযায় সমস্যা দেখে ডাক্তার দেখাতে এসেছে।

আহারে মা তুমি যদি জানতে কী রোগ তোমার শরীরে বাসা বেঁধেছে!

উপরের গল্পে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো জরায়ুর ক্যান্সারজনিত যতগুলো রিক্স ফ্যাক্টর আছে তার সবগুলোই আছিয়া বিবির আছে। কিন্তু ব্যাথা নাই দেখে সে এর ভয়াবহতা বুঝতে পারছে না। ফলে ভয়ানক দেরী হয়ে যায়, তখন আর তেমন কিছু করার থাকে না।

আসুন জরায়ু ক্যান্সারজনিত প্রাইমারী কিছু জেনে নেই।

* জরায়ুমুখ ক্যান্সার কি?
: নারীর জরায়ুর মুখকে সার্ভিক্স বলে। এখানের ক্যান্সারকে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার বলে। বাংলাদেশে এটা গাইনীকলোজিক্যাল ক্যান্সারজনিত মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারন। প্রতি লাখে ২৯.৭ জনের হয়। তারমধ্যে অর্ধেকই মারা যায়।

* কারা বেশি ঝু্ঁকিতে আছে?
– এইচপিভি নামক ভাইরাস ইনফেকশন- ৯৯%
– কম বয়সে বিয়ে
– কম বয়সে বাচ্চা নেওয়া, ঘন ঘন বাচ্চা নেওয়া
– পারসোনাল হাইজিন না মেনে চলা
– অসচ্ছলতা
– যৌণ বাহিত রোগ
– স্বামী, ট্রাক ড্রাইভার বা শিপিং অথবা ডে লেবার
– বহুগামিতা ( স্বামী /স্ত্রী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য)
– স্বামীর প্রথম স্ত্রী সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে মারা যাওয়া।

* লক্ষনঃ
– দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব
– অনিয়মিত রক্তস্রাব
– সহবাস পরবর্তী রক্তস্রাব
– ৩৫ এবং ৫৫ বছর বয়সে বেশি হয়

চিকিৎসাঃ
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে শতভাগ চিকিৎসা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন স্ক্রিনিং পদ্ধতি আছে। তারমধ্যে পেপস স্মেয়ার, ভায়া অন্যতম। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর করতে হয়।

এডভান্স অবস্থায় ডায়াগনোসিস হলে অপারেশন অথবা রেডিওথেরাপি অথবা দুটো দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।

প্রতিরোধঃ
প্রতিরোধক হিসাবে টীকা দেয়া যায়, যা দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। সাধারণত ৯-১৪ বছরের মেয়েদের দেয়া হয়। অন্যরাও দিতে পারে।
রিক্স ফ্যাক্টর এভোয়েড করা,জেনিটাল হাইজিন মেনটেন করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, স্বামী- স্ত্রী একে অপরের প্রতি সৎ থাকলে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

জরায়ু যদিও ফেমিনিন অঙ্গ তবে এর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ যে এইচপিভি ভাইরাস তা কিন্তু ছড়ায় পুরুষদের মাধ্যমে। কাজেই নারী পুরুষ সবাইকেই সচেতন হতে হবে এর থেকে বাঁচতে। একজন নারী কেবলমাত্র একজন নারীই নয়। সে অতি অবশ্যই
কারো না কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো প্রেয়সী, কারো স্ত্রী, এবং কারো না কারো মা। আসুন মায়ের জীবন রক্ষায় একসাথে হাঁটি…

ডা. ছাবিকুন নাহার
মেডিকেল অফিসার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

Lady in Red

ছবিঃডা. ছাবিকুন নাহার

 

Related posts

Leave a Comment